নিজস্ব প্রতিবেদক : সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের দায়ে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত দু্ই কোম্পানির ১২ মালিক, একটি ব্রোকারেজ হাউজের তিন কর্মকর্তা এবং চার বিনিয়োগকারীকে মোট ১০ কোটি ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকো সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান ও পাঁচ পরিচালককে এক কোটি টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। অ্যাপোলো ইস্পাতের ভাইস চেয়ারম্যানকে ১ লাখ টাকা, মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ১ কোটি টাকা এবং তাদের তিন পরিচালককে ৫০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
এ ছাড়া ধানমন্ডি সিকিউরিটিজকে ৫ লাখ টাকা এবং ব্রোকারেজ হাউজিটির সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাাশি প্রতিষ্ঠানটির অর্থ ও হিসাব প্রধানসহ আইটি ইনচার্জকে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
বিনিয়োগকারী সিফাত মাহমুদ আবদুল্লাহকে ৩৫ লাখ টাকা, কেটিএস ফ্যাশনসকে ১০ লাখ টাকা, শাহানারা আক্তার চৌধুরীকে ৫ লাখ টাকা এবং আবুল কাশেম ভূঁইয়াকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বিএসইসির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ব্যাংকো সিকিউরিটিজের মালিক বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতের জন্য ৬৬ কোটি টাকা, অ্যাপোলো ইস্পাতকে যথাসময়ে আর্থিক প্রতিবেদন জমা না দেওয়ার জন্য এবং মেঘনা কনডেন্সড মিল্ককে মূল্য-সংবেদনশীল তথ্য গোপন করা এবং মিথ্যা বিবৃতি দেওয়ার জন্য জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ধানমন্ডি সিকিউরিটিজ বিনিয়োগকারীদের প্রদেয় অর্থের পরিমাণ সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে এবং এর কর্মকর্তা বিএসইসি তদন্ত কমিটিকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করেননি। তাই সংস্থাটি এবং এর তিন শীর্ষ কর্মকর্তাকে জরিমানা করেছে কমিশন।
আনলিমা ইয়ার্ন ডাইংয়ের শেয়ারে কারসাজি করে নিয়ম লঙ্ঘনের দায়ে চার বিনিয়োগকারীকে শাস্তি দিয়েছে বিএসইসি।
বিএসইসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকো সিকিউরিটিজের মালিকরা আমানত সংক্রান্ত নিয়ম লঙ্ঘন করে ক্রেডিট সুবিধার আওতায় বিনিয়োগকারীদের তহবিল নিয়েছে। এরপরও তারা টাকা ফেরত দেয়নি।
বিএসইসি তাদের অভিযোগের সংস্করণ জানতে তাদের তলব করেছিল, কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি।
এর আগে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকো সিকিউরিটিজের লেনদেন স্থগিত করে দেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।
এদিকে, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের দায়ের করা মামলায় ব্যাংকো সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান আবদুল মুহিতকে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিএসইসি রিপোর্টে বলা হয়েছে যে চারজন বিনিয়োগকারী, যারা এমটিবি সিকিউরিটিজের মাধ্যমে শেয়ার আনলিমা ইয়ার্ন শেয়ার লেনদেন করে লাভবান হয়েছেন। তারা কেটিএস ফ্যাশনসের সাথে সম্পর্কিত।
ওই চার বিনিয়োগকারী যৌথভাবে ২০২১ সালের ২৮ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আনলিমা ইয়ার্ন ডাইংয়ের শেয়ার ৩৬.২০ শতাংশ শেয়ার লেনদেন করেছে এবং কোম্পানিটির শেয়ার দামকে প্রভাবিত করেছে। যার ফলে সিরিয়াল ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানিটির শেয়ার ২০.৯৪ শতাংশ দাম বৃদ্ধি পায় এবং ২ কোটি ৫৮ কোটি টাকা লাভ করে।
এছাড়াও, বিএসইসির তদন্ত কমিটি দেখতে পেয়েছে যে মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের উৎপাদন অক্টোবর ২০১৯ থেকে স্থগিত করা হয়েছে। তবে কোম্পানিটি মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হিসাবে এটি প্রকাশ করেনি।
কোম্পানি সম্পত্তি ও যন্ত্র-সরঞ্জামের মূল্য সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করেছে্। এমনকি কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়া সত্ত্বেও সহযোগি প্রতিষ্ঠান মেঘনা পিইটিকে অনিরাপদ ঋণ প্রদান করে নিয়ম লঙ্ঘন করেছে।
মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণের দায় হিসাব করার জন্য সহায়ক নথিও প্রদান করেনি।
Leave a Reply