আমাদের পুঁজিবাজার নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রতিবছর ডিসেম্বর মাস আসলেই শেয়ারবাজারে ব্যাংক সমন্বয়ের (অ্যাডজাস্টমেন্ট) চাপ দেখা যায়। যে কারণে ডিসেম্বর মাসের শেষ দুই সপ্তাহে শেয়ারবাজারে কেনার চেয়ে বিক্রির পরিমাণ বেশি থাকে। পাশাপাশি বাজার এক ধরণের মনস্তাত্ত্বিক চাপে থাকে।
এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। গত বুধবার পর্যন্ত বাজার স্বাভাবিক ধারায় চলছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার ও রোববার হঠাৎ ব্যাংক সমন্বয়ের বড় চাপ দেখা যায়। যার কারণে ওই দুই দিন শেয়ারবাজারে বড় পতন দেখা যায়। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার উভয় বাজারে ঢালাও পতন হয়। ওইদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক পড়ে যায় ১৫ পয়েন্টের বেশি। এর ধারাবাহিকতায় রোববারও উভয় বাজারে বড় পতন দেখা যায়। ওইদিন ডিএসইর সূচক নেমে যায় ১০ পয়েন্টের বেশি।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃহস্পতিবার ও রোববার ব্যাংক সমন্বয়ের কারণে বাজারে সেল প্রেসার বেশি ছিল বিধায় বাজারে বড় পতন হয়েছে। গতকাল সোমবার বড় দিন উপলক্ষে শেয়ারবাজার বন্ধ ছিল। যে কারণে আজ মঙ্গলবার ছিল ব্যাংক সমন্বয়ের শেষ দিন। আগামীকাল থেকে ব্যাংক সমন্বয়ের কোনো বিষয় থাকবে না। কারণ আগামীকাল শেয়ার সেল করলে ডিসেম্বরের মধ্যে আর ঋণ সমন্বয় হবে না। কারণ সমন্বয়ের জন্য শেয়ার সেল করার পর দুই কর্মদিবসের প্রয়োজন হয়। আগামীকাল বুধবার শেয়ার সেল করলে দুই কর্মদিবস আর পাওয়া যাবে না।
তবে ব্যাংক সমন্বয়ের শেষ দিন আজ বাজারে সেল প্রেসার থেকে বাই প্রেসার বেশি থাকে। আজ লেনদেনের প্রথম ভাগে ডিএসইর সূচক প্রায় ১৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে দিনের শেষ ভাগে সূচক বৃদ্ধি সোয়া ৬ পয়েন্টে স্থির হয়। এদিন বিনিয়োগকারীরা শেয়ার সেলের চেয়ে কেনায় বেশি মনোযোগি ছিল।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেহেতু গত কয়েকদিন বাজারে ধারাবাহিক পতন হয়েছে। গত ১১ ডিসেম্বর ডিএসইর সূচক ৬ হাজার ২৭১ পয়েন্ট ছুঁয়ে লেনদেন হয়েছিল। যদিও ওইদিন সূচক ক্লোজিং হয়েছিল ৬ হাজার ২৬৪ পয়েন্টের ওপরে। তারপর থেকে ব্যাংক সমন্বয় সামনে থাকায় সূচক ক্রমাগত নামতে থাকে। আগেরদিন রোববার সূচক ৬ হাজার ২৪০ পয়েন্টের নিচে নেমে যায়। সেখান থেকে সার্পোট নিয়ে সূচক আজ ব্যাংক সমন্বয়ের শেষ দিনেও সামনে এগিয়েছে, আগামী দিন থেকে বাজার সামনেই এগুবে।
আজ উভয় বাজারে সূচক যেমন বেড়েছে, লেনদেনও তেমনি বেড়েছে। আজ যে পরিমাণ কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে, তার চেয়ে দেড় গুণের বেশি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। আজ ডিএসইতে ৩৩৮টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার মধ্যে দর বেড়েছে ৯০টির, কমেছে ৬৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭৯টির।
ডিসইতে আজ ৪৬০ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিনের চেয়ে ৪৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বেশি। আগের দিন রোববার ডিএসইতে ৪১২ কোটি ৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।
আজ ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৪৫ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৬৫ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮৭ পয়েন্টে।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) আজ ১৩ কোটি ৬৬ লাখ ৯১ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫ কোটি ৮৪ লাখ ৮২ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট।
আজ সিএসইতে ২০৮টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৫৪টির, কমেছে ৪৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১০৮টি প্রতিষ্ঠানের।
আগের দিন সিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ১৬৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। যারর মধ্যে দর বেড়েছিল ৩২টির, কমেছিল ৬৫টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৭১টি প্রতিষ্ঠানের।
Leave a Reply