ডেস্ক রিপোর্ট : ভারতের জনপ্রিয় মসলা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এমডিএইচের পণ্যে দূষণ ধরা পড়ার পর কড়া নজরদারির মধ্যে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি থাকার অভিযোগে ২০২১ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি করা ১৪.৫০ শতাংশ মসলা পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গত মাসে সিঙ্গাপুর এবং হংকয়ের সরকারি প্রশাসন নিজেদের অভ্যন্তরীণ বাজারে এমডিএইচ এবং এভারেস্টের তৈরি পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
এই সম্পর্কিত এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রশাসন বলেছে, এই দুই কোম্পানির পণ্যে ‘এথিলিন অক্সাইড’ নামের একটি ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছে। মানবদেহে দীর্ঘদিন ধরে এই উপাদানটি প্রবেশ করলে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার গুরুতর ঝুঁকি থাকে।
তবে ভারতের কোম্পানিগুলো তাদের মসলা পণ্য নিরাপদ বলে দাবি করে যে, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং প্যাকেজিংয়ের কোনো পর্যায়ে তাদের মসলায় ইথিলিন অক্সাইড ব্যবহার করা হয় না।
ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) এর পরীক্ষায় এমডিএইচ এবং এভারেস্ট পণ্যগুলিতে উচ্চ মাত্রার ইথিলিন অক্সাইড পাওয়া গেছে।
এফডিএ-র একজন মুখপাত্র এই বিষয়ে বলেছেন যে ভারতীয় মশলায় ভেজালের অভিযোগ নতুন নয়। ২০২১ সালে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা মশলাগুলির মধ্যে ১৪.৫০ শতাংশ মশলার প্যাকেটে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে।
ভারতের অভ্যন্তরীণ মসলার বাজারের আকার ১ ট্রিলিয়ন ডলার। এছাড়া বিভিন্ন দেশে মসলা রপ্তানি করে দেশটি প্রতি বছর ৪ বিলিয়ন ডলার আয় করে।
বিশ্ববাজারে ভারতীয় মশলাগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে – মরিচ-ধনিয়া-হলুদ গুঁড়া, এলাচ এবং মিশ্র মশলা। এগুলি ছাড়াও শিং, জাফরান, জায়ফল, মৌরি, লবঙ্গ এবং দারুচিনিরও বিশ্বজুড়ে প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
ভারতের ১০০ বছর বয়সী কোম্পানি এমডিএইচ সর্বশেষ নজরদারির আগেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কারণ, তখন তাদের মসলায় সালমোনেলা নামের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল। এই ব্যাকটেরিয়া গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগের জন্য দায়ী।
ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) অনুসারে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এই বছরের ৩ মে পর্যন্ত এমডিএইচের ৬৫টি চালানের ১৩ বা ২০ শতাংশ সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে অস্বীকার করা হয়েছিল।
এফডিএ প্রতিটি চালানে কতটা মশলা দূষিত ছিল তা নির্দিষ্ট করেনি। তবে, এফডিএ অনুসারে, পাঁচমিশালি মসলা, চাটনি, মেথি এবং অন্যান্য পণ্যের ১৩টি চালানকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
একই অভিযোগ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, ভারত থেকে আমদানি করা মরিচের গুঁড়া ও গোলমরিচে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিকের সন্ধান পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ, মালদ্বীপ ও অস্ট্রেলিয়ার খাদ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলিও আমদানি করা ভারতীয় মসলা পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভারতীয় মসলায় ভেজালের অভিযোগ আগে থেকেই রয়েছে। এর আগে ২০১৪ সালে কলকাতা-ভিত্তিক বায়োকেমিস্ট এবং বিশেষজ্ঞ ইপসিতা মজুমদার পশ্চিমবঙ্গে জনপ্রিয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মরিচ, হলুদ, ধনে, গরম মসলা পাউডার এবং কারি পাউডারে সীসা পরীক্ষা করেছিলেন। পরে তিনি বলেন, মসলা গুঁড়ার উজ্জ্বলতা বাড়াতে কৃত্রিম রং ব্যবহার করে; সেই রংগুলোই সীসার উৎস।
Leave a Reply