সভা শেষে সচিবালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, আমাদের একটা আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩ আছে। এটি দিয়ে আমাদের যে বিভিন্ন নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে, তারা আমাদের এখানে কার্যক্রম করে থাকে। সেটি ১৯৯৩ সালে প্রণীত একটা আইন এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় এসে নানা রকম অভিজ্ঞতা এবং নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দেখা গেছে আইনের দুর্বলতার কারণে এই সেক্টরে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। যে কারণে আইনটি যুগোপযোগী করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে একটি খসড়া ২০২১ সালে মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেটি আজকে উপস্থাপন করা হয় এবং চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপির একটি সংজ্ঞা সন্নিবেশিত করা হয়েছে। যেটা আমাদের কিছুদিন আগে যে ব্যাংক কোম্পানি আইন করা হয়েছে সেখানে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, সেভাবে। বলা হয়েছে একজন ব্যক্তিকে তিনটি কারণে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি হিসেবে গণ্য করা যাবে। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি ঋণ সময়মতো পরিশোধ না করেন, যে কারণে দেখিয়ে ঋণ দিয়েছেন সেই কারণে ব্যবহার না করে যদি অন্য কারণে ব্যবহার করেন এবং যেসব কাগজপত্র জমা দিয়ে ঋণ নিয়েছিলেন পরে সেগুলো যদি ভুয়া বলে চিহ্নিত হয়।
মাহবুব হোসেন ইচ্ছা করা ঋণখেলাপির শাস্তির বিষয়ে কি বলা হয়েছে তাও জানান। তিনি বলেন, যখন একজন ব্যক্তি ইচ্ছা করা ঋণখেলাপি হবেন, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের একটা তালিকা রাখবে। তালিকা হওয়ার পর যখন তারা নোটিশ পাবেন, সেই নোটিশ পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে ঋণগ্রহীতার কাছে তার প্রাপ্য অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে, সংশ্লিষ্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি ক্ষেতমতে উহার পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ক্রমে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করবে এবং এরূপ মামলা সংশ্লিষ্ট ঋণ বা অগ্রিম বা পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে অর্থ ঋণ আদালতের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করবে না। এর মানে হলো, তার বিরুদ্ধে সহসা মামলা করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, যখন উনি তালিকাভুক্ত থাকবেন তখন বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে ইচ্ছা করে ঋণখেলাপির তালিকা প্রস্তুত করতে পারবে এবং বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ট্রেড লাইসেন্সে নিষেধাজ্ঞা, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের (আরজেএসসি) কাছে কোম্পানি নিবন্ধনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে।
এর মানে হলো, যখন সে ইচ্ছা করা ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত থাকবেন পরবর্তী কোনো বিজনেস করার ক্ষেত্রে অথবা বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। দুই মাসের মধ্যে যদি উনি শোধ না করেন সরাসরি তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যাবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিদ্যমান আইনে একজন ব্যক্তি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কত শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে পারবেন এটি বেঁধে দেওয়া ছিল না। এখন বলা হচ্ছে, এক ব্যক্তি বা একই পরিবার থেকে ১৫ শতাংশের বেশি শেয়ার নেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, বর্তমান আইনে পরিচালকদের সংখ্যা নির্দিষ্ট ছিল না। এখন এটিকে দুইজন স্বতন্ত্র এবং সব মিলিয়ে ১৫ জন পরিচালক থাকতে পারবেন। তবে একটি পরিবার থেকে যদি তাদের শেয়ারের পরিমাণ ৫ শতাংশের কম হলে একজন পরিচালক থাকবেন। ৫ শতাংশের বেশি হলে সর্বোচ্চ দুইজন থাকতে পারবেন। এক পরিবার থেকে দুইজনের বেশি পরিচালক থাকতে পারবেন না।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যমান আইনে পরিচালকের কোনো মেয়াদ বেধে দেওয়া ছিল না। এখন পরিচালকের মেয়াদ তিন বছর করা হচ্ছে। পর পর তিন মেয়াদে পরিচালক থাকতে পারবেন। অর্থাৎ একজন একটানা নয় বছর পরিচালক থাকতে পারবেন।
মাহবুব হোসেন বলেন, ব্যাংক সাবসিডিয়ারি কোম্পানি তৈরি করতে পারে। নতুন আইনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাবসিডিয়ারি কোম্পানি করতে পারবে না।
তিনি জানান, সুদ মওকুফের বিষয়ে বিদ্যমান আইনে কোনো নির্দেশনা ছিল না। এখন বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া সুদ মওকুফ করা যাবে না। সম্পূর্ণ সুদ কখনো মওকুফ করা যাবে না। কষ্ট অফ ফান্ড অবশ্যই আদায় করতে হবে- বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে জরিমানা ও শাস্তি বাড়ানো হয়েছে। লাইসেন্সের শর্ত না মানার শাস্তি ১০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা করা হচ্ছে। বিধিবিধান লঙ্ঘন করে ঋণ দিলে বিদ্যমান আইনে প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হয়। এটিকে সংশোধন করে বলা হয়েছে, ১০ লাখ টাকা বা ছাড় করা ঋণের বিদ্যমান স্থিতির মধ্যে যেটি বেশি সেটি প্রত্যেক পরিচালক ও কর্মকর্তাকে জরিমানা হিসেবে দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিদেশিরা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার নিতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। কি পরিমাণ শেয়ার বিদেশি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি পাবে তা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করবে। পাশাপাশি একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় থাকতে পারবে না।
Leave a Reply